প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ বিএনপির শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে গতকাল ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলের মহাসচিবসহ নেতাকর্মীরা : নয়া দিগন্ত –
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নতুন বাংলদেশ গড়ার শপথ নিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। গতকাল এ দিনটিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এই শপথ নেন নেতাকর্মীরা।
মাজারের সামনে সমবেত হয়ে তারা মুক্ত পরিবেশে নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়েছেন বলে জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন, বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য নিজে কাজ করছেন সেই বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য আজকে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি, শপথ নিয়েছি। তিনি বলেন, সব চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠা করা, মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমরা কাজ করে যাব। এটা আমাদের শপথ।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে ২০২৪ সালে যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি তার জন্যে বিএনপি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে। বিএনপির সবচেয়ে বেশি নেতা-কর্মী গুম হয়ে গেছে, ২ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে শুধু গণতান্ত্রিক সংগ্রামের জন্য।
তিনি বলেন, আমরা আজকে এদিনকে স্মরণ করছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে ছাত্র-জনতাকে সাথে নিয়ে এই দিনটিকে মুক্ত স্বাধীন পরিবেশে পালন করতে পারছি। আমরা বিশ্বাস করি, আগামী দিনে সঠিক রাজনীতি এবং জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা সঠিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। এখন বিএনপির মূল কাজ হচ্ছে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেসব আদর্শকে বাস্তবায়িত করা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তাকে প্রতিষ্ঠিত করা।
বেলা ১১টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খানসহ কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে নিয়ে শেরে বাংলা নগরে জিয়ার মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং মরহুম নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মুনাজাত করেন।
চন্দ্রিমা উদ্যানে মানুষের ঢল : বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ঢল নামে। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা আসে। তারা ‘শুভ শুভ জন্মদিন, বিএনপির জন্মদিন’, ‘লও লও লও সালাম, জিয়া তুমি লও সালাম’, এক জিয়া লোকান্তরে লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে’, ‘আজকের এই দিনে জিয়া তোমায় মনে পড়ে’ ইত্যাদি স্লোগানে বিজয় সরণী থেকে চন্দ্রিমা উদ্যান সরব করে রাখে নেতা-কর্মীরা। কর্মীরা রঙিন ব্যানার নিয়ে আসে। কর্মীদের মাথায় বাধা ছিল বিএনপির পতাকা সম্বলিত ফিতা।
দীর্ঘ বছর পরে এই প্রথম চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার সমাধিস্থলে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখা গেল। অতীতে পুলিশি নিরাপত্তার কারণে নেতা-কর্মীদের মিছিল এবং প্রবেশে ছিল নানা বিধিনিষেধ।
জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বের পর মরহুম নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়। এই সময়ে দলের নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, নাসির উদ্দিন অসীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, নাজিমউদ্দিন আলম, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শাম্মী আখতার, মাহবুবুল হক নান্নু, হারুনুর রশীদ, সেলিম রেজা হাবিব, কাজী আবুল বাশার, আমিরুজ্জামান শিমুলসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা ছিলেন।
অঙ্গসংগঠনের মধ্যে ছিলেন, সাইফুল ইসলাম নিরব, আমিনুল হক, তানভীর আহমেদ রবিন, আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খানসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
বন্যায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি সীমিত : দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভয়াবহ বন্যার কারণে বিএনপি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ঘোষিত কর্মসূচি সীমিত করে এর অর্থ দলের ত্রাণ তহবিলে দিয়েছে।
৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা, কেন্দ্রীয় শহীদ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সারা দেশে শোভাযাত্রা, মৎস্য অবমুক্তকরণ এবং বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি ছিল।
সকালে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়সহ সারা দেশে উত্তোলন করা হয় দলীয় ও জাতীয় পতাকা। দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল হয়।
দোয়া মাহফিলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ডা: এ জেড এম জাহিদ হাসান, মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (অব:), সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।