ময়মনসিংহ মহাসড়কের সিএনজি-অটোরিকশা ও চাঁদা আদায়ের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, ময়মনসিংহ জেলায় অনিবন্ধিত সিএনজি প্রায় ১২ হাজার ও ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনসহ অটোরিকশার সংখ্যা জেলায় প্রায় ২২ হাজার থেকে প্রতি মাসে চাঁদা আদায় হয় ৭৮ লাখ টাকার বেশি। আর দৈনিক গড়ে ১০০ টাকা হিসাবে বিভিন্ন সড়কে চাঁদা বাবদ মাসে আদায় করা হয় ৫৩ লাখ টাকার বেশি। ময়মনসিংহ জেলার প্রধান সড়কগুলোতে অনেক আগে থেকেই তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে জেলা শহরের প্রধান সড়ক, ১৩টি উপজেলা উপপ্রধান সড়ক এবং শাখা সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অনিবন্ধিত আরও প্রায় ৩ হাজার অটোরিকশা। ময়মনসিংহ জেলায় প্রায় আড়াই বছর ধরে সিএনজিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে রাস্তায় নামা বন্ধ হয়নি নিত্যনতুন অটোরিকশার।
বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দিয়ে সড়কে চলছে এসব যান। শুধু অনিবন্ধিত নয়, নিবন্ধিত অটোরিকশাগুলো চাঁদা দিয়ে অবাধে চলছে মূল সড়কে। অভিযোগ, জেলায় পরিবহন খাতের শুধু সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকেই মাসে চাঁদাবাজি হয় প্রায় ৪৪ লাখ টাকার বেশি। এই টাকা কোথায় যায়? এমন প্রশ্ন অনেকের। নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গত আড়াই বছরে একদিকে যেমন কয়েক কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে সরকার, আবার ময়মন- সিংহ নগরীরসহ জেলার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড। অটোরিকশা থেকে প্রতিদিন ও সিএনজি থেকে মাসিক জিবি হিসেবে ৪০০ করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ চাঁদা পুলিশের সাদাপোশাকে এক ব্যক্তিসহ ৩৫ জন তুলেন। পাশাপাশি লাইনম্যান, সিটি টোল ও পুলিশের নামেও মাসিক চাঁদা তোলেন এমন ব্যক্তিরা। যে সকল ব্যক্তিরা চাঁদা তুলেন এমন একজন ব্যক্তির সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের কাছে সত্য কথা বলা মানে বিপদ। পরে পুলিশের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমার নাম বলে দেয়। এজন্য সাংবাদিক নাম শুনলে আমি ভয় পাই। যথেষ্ট ভালো আছি তথ্য দিয়ে বিপদে পড়তে চাই না। আপনারাই খোঁজ করে দেখুন কত লাথ টাকা মাসিক জিবি। তোলা হয়। এই টাকা কে মেয় সবাই জানে, অনেক সময় ফেরেশতা সাজে তারা। আমিও আর কিছু বলতে চাই না, আমার নাম কলবেন না প্লিজ। তাহলে আমার দুটি সিএনজি ধরে নিয়ে যাবে। ময়মনসিংহ শহরের অটোরিকশাচালক আতিকুল অভিযোগ করে প্রতিবেদককে জানান, তারা যা আয় করেন তার বেশির ভাগই চলে যায় শ্রমিক ও পুলিশের পকেটে। তিনি বলেন, এসপি আবির সাহেবের সময় কোন চাঁদা দিতে হতো না। তারা জানান, ময়মনসিংহ নগরীর পাট গুদাম ব্রিজ মোড় থেকে প্রতিদিন ভোর থেকে কয়েক হাজার সিএনজি ও অটোরিকশা জেলার বিভিন্ন সড়কে চলাচল করে। প্রতিদিন পাটগুদাম ব্রিজ থেকে প্রতিটি সিএনজি- অটোরিকশাচালক শ্রমিক-মালিক সংগঠনকে চাঁদা দিতে হয় এবং পুলিশকে জিবি হিসেবে দিতে হয় মাসিক ৪০০ টাকা
একজন সিএনজি ড্রাইভার নাম প্রকাশ চাশ না করার শর্তে (আলী) তিনি জানান, আমার একটা নিজের সিএনজি, কিস্তির মাধ্যমে নিয়েছি। কাগজপত্র করতে গিয়ে বহু চেষ্টা করেছি, বহু জনের হাতে পায়ে ধরেছি। অনেক লোকজনকে টাকাও দিয়েছি। তারপরও অনুমোদন পাইনি। আমার বাড়ির পাশের এক আওয়ামী লীগ নেতার মাধ্যমে সিএনজিকে ভর্তি করি। ভর্তি। হয়েছি ৫০০০ ও টাকা দিয়ে। এখন মাসে ৪০০ করে জিবি দেই। তিনি আরো বলেন, আমি একটি গাড়িতে ৪০০ টাথন দেই, সারা জেলায় গড়ে ১২ হাজার সিএনজি চলে, তাহলে হিসাব করেন কত টাকা হয়। সিএনজি ড্রাইভার এর মোবাইল থেকে হিসেব করে প্রতিবেদককে বলেন, আরে ভাই প্রাই ৪২ লাখ টাকা তোলা হয়। ব্যাটারি চালিত অটো তো বাদই এ ছাড়া টাউন হল মোর, মহানগরীর মেডিকেল কলেজ গেহাট, বাইপাস,ফুলবাড়িয়া বাস স্ট্যান্ডে লাইনম্যানকে ১০ ১০ টাকা, সিটি টোল ১০ টাকা, লাইনম্যানকে দিতে হয় ২০ টাকা। প্রকাশ্যে নিচ্ছে কোন আইনি ব্যবস্থাও নিচ্ছেন না পুলিশ। যারা চাঁদা তুলেন তারা বলেছেন, ৫০% টাকা পুলিশকে দিতে হয়। তাই তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন সহ জেলার বিভিন্ন মোড়ে যানজট লেগেই থাকে। ১০ মিনিটের জায়গায়, প্রায় এক ঘন্টাও যেতে পারে না সাধারণ মানুষ প্রধান সড়ক থেকে শাখা সড়কে ঢুকলেও দিতে হয় চাঁদা। এভাবে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি অটোডিকশাকে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এটা হলো দৈনিক হিসাব। মাস হিসাবেও চাঁদা দিতে হয় চালকদের। অটোরিকশাচালকরা জানান, প্রতি মাসে পুলিশের নাম ভাঙিয়ে অটোরিকশা সংগঠনের নেতারা টাকা নেন প্রতিটি অনিবন্ধিত সিএনজি থেকে পুলিশের নামে ৪০০ টাকা চাঁদা আদায় করেন। এই চাঁদা শুধু মহানগরী পাটগুদাম ব্রিজ কিংবা টাউন হল নয়, জেলার প্রতিটি উপজেলা স্যান্ডের শ্রমিক-মালিক নেতারা এই চাঁদা আদায় করেন অভিযোগ করে চালকরা বলেন, ব্যক্তিগত খরচ, গ্যাস বিল, চা খচর, অফিস খরচ, চাঁদার টাকা উপার্জনে হিমশিম খেতে হয় চালকদের। তাই বাধ্য হয়েই যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়া করেন চালকরা। ময়মনসিংহ জেলায় সিএনজি অটোরিকশা থেকে মাসে প্রায় ৭৮ লাখ টাকার চাঁদাবাজি তোলা হয়, চাঁদা আদায়ের জায়গাগুলোর একটি হিসাব দিয়েছেন অটোরিকশাচালক আবুল হোসেন, জিন্নত মিয়া ও জিয়া হোসেন। তারা জানান, পাটগুদাম ব্রিজ মোড় জেলা শহরের চরপাড়া, টাউন হল মোর, বাইপাস, ফুলবাড়িয়া স্ট্যান্ড, শল্পগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে জামালপুর বাইপাস সড়ক, চরাপাড়া মোড় থেকে ত্রিশাল, ভালুকা, ত্রিশাল বালিপাড়া বোড, নান্দাইল চৌরাস্তা, ১৮ বাড়ি, তারাকান্দা, ফুলপুর থেকে শেরপুর রোড, মুক্তাগাছা, মুক্তাগাছা থেকে মধুপুর, গফরগাঁও থেকে মশাখালী, বালিপাড়া বালির মোড়, কেওয়াটখালী থেকে গফরগাঁও, পরানগঞ্জ ঈশ্বরগঞ্জ থেকে উজবোর্ড থেকে কেন্দুয়া, হালুয়াঘাট থেকে দোবাউড়া, বাটাজোর থেকে সদিপুর, ফুলবাড়িয়া থেকে আশিম সড়কে চাঁদা দিতে হয় তাদের।
১৩ টি উপজেলা ও একটি থানা সব রাস্তা মোড়েই তোলা হয় চাঁদা। ইতিমধ্যে নবনির্বাচিত ভালুকার এমপি এম এ ওয়াহেদ, হালুয়াঘাট- দোবাউড়ায় নির্বাচিত এমপি সায়েম, ত্রিশালের এমপি এবিএম লেবাড়িয়ার এমপি আব্দুল মালেক সরকার ও ম্যামনসিংহ মোহিত রহমান শান্ত ইতিমধ্যে পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন। এমন ঘোষণা আসার পর চালকদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। এই প্রথম পাচজন তরুণ এমপি এমন ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই প্রশংসায় ভাসছেন। অনিবন্ধিত দুই ধরনের অটোরিকশা থেকেই তোলা হয় এসব চাঁদা। নিবন্ধিত হলে শুধু কিন্তু ক্ষেত্রে চাঁদার পরিমাণ কমে। চালকরা জানান, জেলায় কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ হাজার সিএনজি রয়েছে। এসব সিএনজি চালকদের কাছ থেকে সমিতিতে ভর্তি নামে চাঁদা আদায় থেকে শুরু করে সড়কে প্রতিদিন এবং পুলিশের নামে মাসিক হিসাবে চাঁদা আদায়ে কারা জড়িত বা নিয়ন্ত্রণ করছে কে। এমন তথ্য কারও কাছে নেই। থাকলেও প্রকাশ করতে নারাজ। জেলার এসপি সবই জানেন বলে একদিক মালিক সমিতির নেতা জানান। তারা নাম বলতে পারবে না। কারণ নাম বললে পরদিন থেকে আর সড়কে উঠতে পারবে না গাড়ী নিয়ে। অটোরিকশা ও চাঁদা আদায়ের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, নগরীসহ জেলায় অনিবন্ধিত ২০ হাজার অটোরিকশা থেকে প্রতি মাসে চাঁদা আদায় হয় ৩৫ লাখ টাকার বেশি। আর দৈনিক গড়ে ১০০ টাকা হিসাবে বিভিন্ন সড়কে চীনা বাবদ মাসে আদায় করা হয় ৭৮ লাখ টাকার বেশি। আড়াই বছর ধরে বন্ধ অটোরিকশা নিবন্ধন।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে নিবন্ধন বন্ধ থাকায় এখন সিএনজির সংখ্যা মাত্রা ছাড়িয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। ময়মনসিংহ মহানগরীসহ জেলায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো থাকে সিএনজি অটোরিকশার দখলে। এতে এসব সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায় ট্রাফিক পুলিশ। যানজট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে প্রায় সময়েই অবৈধ যানবাহন প্রধান সড়কে চলতে গতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে শহরে মাইকিংও করছে ট্রাফিক বিভাগ। তবে কাজের কাজ খুব একটা হচ্ছে না। অনিবন্ধিত অটোরিকশার মালিক জাজিরুল হোসেন, আবু কামাল জানান, আড়াই বছর সিএনজি রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রয়েছে। তাই চেষ্টা করেও রেজিষ্ট্রেশন করাতে পারিনি।
অটোরিকশার মালিক আজিবুল ইসলাম বলেন, ‘চার বছর আগে একটি সিএনজি কিনছি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে রেজিস্ট্রেশনের জন্য বিআরটিএ ময়মনসিংহ অফিসে যোগাযোগ করলে জানায়, সিএনজি রেজিস্ট্রেশন বন্ধ। তাই আর রেজিস্ট্রেশন করি নাই। সাড়ে তিন হাজার টাকা নিয়ে সিএনজি মালিক সমিতিতে ভর্তির পর সড়কে চলছে তার সিএনজিটি ।তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে * ধরলে টাকা দিয়ে দেবির করে ছাড়িয়ে আনি। ব্রেজিট্রেশন করেও লাভ কি? রাস্তায় চলতে সব সিএনজির খরচ একই। মাসের শেষে সময়মতো চাঁদা দিয়ে দিলে আর সমস্যা হয় না।
‘পুলিশও নিচ্ছে টাকা’: সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের কাছ থেকে তোলা চাঁদার একটি অংশ পুলিশ নেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। আবার নিবন্ধন না থাকায় প্রধান সড়কে অটোরিকশা থামিয়ে নানা অনিয়ম দেখিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজিও। ও করে ট্রাফিক পুলিশ। হিসাব নেই বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগের কাছেও। নিবন্ধিত সিএনজিচালিত অটোরিকশার হিসাব থাকলেও অনিবন্ধিত অটোরিকশার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারেনি বিআরটিএ ময়মনসিংহ অফিস ও জেলা ট্রফিও বিভাগের টিআই প্রশাসন মাহাবুব মামনসিংহ ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ ভাগের পুলিশ পরিদর্শক (চিজ্ঞাই) মাহাবুব বলেন,’বর্তমানে সড়কে ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। সঠিক সংখ্যা জানা না থাকলেও বারণা করা হচ্ছে, জেলায় ১০ থেকে ২০ হাজার অটোরিকশা রয়েছে। যার কারণে যানজট নিয়ন্ত্রণে হিম- শিম খেতে হচ্ছে। আমরাও যানজট নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছি। ‘সড়কের অবস্থানের দিক বিবেচনায় জেলা পরিবহন কমিটির সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে বৈধ অটোরিকশার ক্ষেত্রে অন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে।