লেন -দেন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে পাসপোর্ট অফিসের জয়নাল এবং জাকির
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতির অভয়ারণ্য, ঘুষ ছাড়া জমা হচ্ছে না পাসপোর্টের আবেদন
অফিস ডে ছাড়াও বিশেষ দিনে উত্তোলন করা হয় না জাতীয় পতাকা
দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট আবেদন দিলে পড়ে বিশেষ চিহ্ন
সাইফুল মালেক প্রতিবেদককে বলেন আমি আপনার উপর ফেডাপ
দালাল না ধরলেই পাসপোর্টের আবেদনে দেখানো হয় ‘ত্রুটিপূর্ণ’
অর্থের বিনিময়ে সরকারি মনোগ্রামে বিশেষ চিহ্নের ব্যবহার করছে মিলন কম্পিউটার এন্ড ডিজিটাল স্টুডিও ।
মোঃ আলমগীর হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার :-
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঘুষ-দুর্নীতির যেন শেষ নেই। দুর্নীতি রোধে মাঝে মাঝে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনা গেলেও কিছুদিন পরই দেখা যায় সবকিছু চলছে আগের মতোই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একদিকে কড়াকড়ি করলে আরেকদিকে খুলে যায় দুর্নীতির নতুন পথ। বিশেষ করে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসগুলো যেন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এসব অফিসে অলিখিতভাবে দালাল নিয়োগ দিয়ে প্রকাশ্যে চলে ঘুষের কারবার।
গেল ১৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সৌদি আরব প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা তার পাসপোর্ট এর সমস্যা নিয়ে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর সহকারী পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমানের নিকট গেলে তিনি ডাটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটর সাইফুল মালেক কে দায়িত্ব দিলে ও ১৪ দিনে কোন ব্যবস্থা নেন নি সাইফুল মালেক ।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে বিস্তারিত জানতে চাইলে, প্রতিবেদক কে সাইফুল মালেক বলেন , আমি আপনার উপর ফেডাপ ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অফিস ডে ছাড়াও বিশেষ দিনে উত্তোলন করা হয় না জাতীয় পতাকা।
এছাড়া গেল ২০ ই ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস চাঁপাইনবাবগঞ্জ গিয়ে দেখা যায়, বিশেষ চিহ্ন ব্যবহারিত পাসপোর্টের আবেদন গুলো অত্যন্ত সুচারু ভাবে গ্রহণ করছেন সহকারী হিসাবরক্ষক মো: জয়নাল আবেদীন । এবং কিছু কিছু আবেদন গ্রহণ করে তাদের ৭/৮ দিন পরে ফিঙ্গার করতে আসতে বলছেন। এমনকি ব্রাক ব্যাংকের চালান করা আবেদন এ সিটি ব্যাংকের সীল ব্যাবহার করা হচ্ছে। এভাবে আঞ্চলিক পাসপোর্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর আসে পাশের কম-বেশি প্রতিটি দোকানের রয়েছে বিশেষ চিহ্ন। এমনকি সাধারণ পাসপোর্টে এক্সপ্রেস সীলের ব্যবহার ও করছে অফিসের আশ-পাশের দোকানগুলো । এছাড়া ও কোর্ট সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিস্তার লাভ করেছে এই সিন্ডিকেট ।
সরকার ই-পাসপোর্ট চালু করার পর সুযোগসন্ধানীরা এমআরপি নবায়নের নামে এমন রমরমা ঘুষ বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। বিশেষ করে জাতীয় পরিচয়পত্রে তথ্যগত জটিলতার কারণে যারা ই-পাসপোর্ট করাতে পারছেন না, তারাই হচ্ছেন এর শিকার। ই-পাসপোর্ট এড়িয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে তারা নবায়ন করিয়ে নিচ্ছেন পুরোনো পাসপোর্ট। প্রশ্ন হলো, পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না কেন? ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে স্বদিচ্ছা থাকলে তো এমনটি হওয়ার কথা নয়। অভিযোগ রয়েছে, পাসপোর্ট খাত দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সেবা খাতগুলোর অন্যতম। এ খাতে ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানি চলে অব্যাহতভাবে। এর আগেও অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ সংক্রান্ত নানা তথ্য। মনে রাখা দরকার, সমগ্র বিশ্বে পাসপোর্ট প্রাপ্তি নাগরিক অধিকারগুলোর অন্যতম। অথচ এ অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে অনিয়মের শিকার হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষ। পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছে তারা।
ভুলে গেলে চলবে না, হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত সেবা পাওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। অথচ বাস্তবতা হলো, দেশে ঘুষ ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া যায় না বললেই চলে। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লাগামহীন দুর্নীতি সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার খর্ব করছে এবং এর ফলে প্রান্তিক ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা দেখছি, দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখার পরও প্রবাসী শ্রমিকরা পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে নানাভাবে দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অথচ পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিবাজদের কারণে একশ্রেণির মানুষ ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে সেবা নিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে পারে না। সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানি, ভোগান্তি ও দুর্নীতিমুক্তভাবে পাসপোর্ট পেতে পারে, সে জন্য প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসে অভিযান পরিচালনা এবং নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন। প্রবাসী শ্রমিকসহ দেশের সাধারণ মানুষ যাতে প্রয়োজনের সময় কোনোরকম হয়রানি ও ভোগান্তি ছাড়া পাসপোর্ট পেতে পারে, সেজন্য সরকার পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ এর সব আঞ্চলিক অফিস দুর্নীতিমুক্ত করার পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।
সেবাপ্রত্যাশীরা জানিয়েছেন, পাসপোর্টের আবেদনে ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে আবেদন নিতে দেরি করেন কর্মকর্তারা। তবে কোনো দালাল বা ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আবেদন করলে তখন ত্রুটিপূর্ণ আবেদনও গ্রহণ করা হয়। এজেন্সিগুলোর সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের কর্মরত কর্মচারীদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বলে ধারণা করছে তারা ।
এ বিষয়ে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস চাঁপাইনবাবগঞ্জ সহকারী পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আনীত অভিযোগ গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পাসপোর্ট, ভিসা ও ইমিগ্রেশন) প্রধান কার্যালয়, ঢাকা সেলিনা বানু ‘র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।